মুশরিকের শাস্তি
শির্ক
যেহেতু বড় গুনাহ, তাই আল্লাহ শির্ককারী তথা মুশরিককে শাস্তিও দেবেন বড় মর্মন্তুদ।
প্রথম
শাস্তি :
আল্লাহ
মুশরিকের সিয়াম, সালাত, হজ বা যাকাত- কোনো কিছুই কবুল করেন না, যাবৎ সে তাওবা করে
ফিরে আসে। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨ ﴾ [الانعام: ٨٨]
‘আর যদি তারা শির্ক করত, তারা যা
আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৮৮}
আল্লাহ
আরও বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥ ﴾ [الزمر: ٦٥]
‘আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে
যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই
তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। {সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৬৫}
দ্বিতীয়
শাস্তি :
তাওবা
না করে মারা গেলে আল্লাহ কোনো শির্ককারীকে ক্ষমা করবেন না, যদিও সে সিয়াম, সালাত,
হজ ও যাকাত আদায় করে এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন
এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে
আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
অতএব
সব গুনাহই আল্লাহ মাফ করতে পারেন যা পরিত্যাগ না করেই সে মৃত্যু বরণ করেছে, কেবল
শির্ক ছাড়া। শির্ক থেকে তাওবা না করে মারা গেলে তার নিস্তার নেই। আল্লাহ রাব্বুল
‘আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান’।
{সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
হাদীসেও
দেখুন সেই একই কথার পুনর্ধ্বনি। শির্ক না করে শত পাপ করেও নিস্তারের সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু শির্কের ক্ষমা নেই। সাহাবী আবূ যর (গিফারী) রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَرَضَ
لِي جِبْرِيلُ ، قَالَ: بَشِّرْ أُمَّتَكَ أَنَّهُ مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ
بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الجَنَّةَ، قُلْتُ:
يَا جِبْرِيلُ، وَإِنْ سَرَقَ،
وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ: نَعَمْ " قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ زَنَى؟ قَالَ:
«نَعَمْ، وَإِنْ شَرِبَ الخَمْرَ»
‘আমার সামনে জিবরীল আবির্ভূত হলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার
উম্মতদের সুসংবাদ দিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা
অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে থাকে? তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে থাকে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে
এবং চুরি করে থাকে? তিনি বললেন, যদিও সে মদ পান করে’। [বুখারী : ৬৪৪৩;
মুসলিম : ৯৪]
তৃতীয়
শাস্তি :
আল্লাহ
তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তার সঙ্গে কাফেরের অনুরূপ আচরণ করবেন। যদিও সে
সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, হজ সম্পাদন করে এবং যাকাত প্রদান আর নিজেকে
মুসলিম হিসেবে দাবি করে। আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائدة: ٧٢]
‘নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার
উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো
সাহায্যকারী নেই’।
{সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৭২}
পক্ষান্তরে
অন্তত শির্ক না করে কেউ যদি মারা যায় তাহলে তার জন্য পরিত্রাণের বার্তা রয়েছে।
জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«مَنْ
مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ
بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ»
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার না করে
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে কোনো অংশীদার সাব্যস্ত করে
সাক্ষাৎ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। [মুসলিম
: ৯৩]
চতুর্থ শাস্তি :
মুশরিকের
ক্ষেত্রে ফেরেশতা, নবী বা মুমিন তথা কোনো সুপারিশকারীই কাজে আসবে না। পীরের কথা তো
বলাই বাহুল্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَمَا تَنفَعُهُمۡ شَفَٰعَةُ ٱلشَّٰفِعِينَ ٤٨ ﴾ [المدثر: ٤٨]
‘অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না’। {সূরা আল-মুদ্দাস্সির, আয়াত : ৪৮}
আবূ
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا
فَرَغَ اللَّهُ مِنَ القَضَاءِ بَيْنَ العِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ
بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، أَمَرَ المَلاَئِكَةَ أَنْ
يُخْرِجُوا مِنَ النَّارِ، مَنْ كَانَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا، مِمَّنْ
أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ، مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا
اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ
ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ
تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُودِ، فَيَخْرُجُونَ مِنَ النَّارِ
‘যখন আল্লাহ বান্দাদের
বিচারকার্য সম্পাদন সম্পন্ন করবেন এবং জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করেনি, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে আল্লাহ
ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। জাহান্নামে ফেরেশতারা সিজদার চিহ্ন দেখে তাদের চিনতে পারবেন। আগুন বনী আদমের সবই ভষ্ম করতে পারবে কিন্তু সিজদার চিহ্ন ভক্ষণ
করতে পারবে না। কেননা, আল্লাহ জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো
মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে’। [বুখারী : ৭৪৩৭]
পঞ্চম
শাস্তি :
শির্ককারীদের
জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন না। আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
«لِكُلِّ
نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي
اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ
نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ
شَيْئًا»
‘প্রত্যেক নবীর জন্য একটি করে কবুল দো‘আ রয়েছে। প্রত্যেক নবীই
আগেভাগে দো‘আ করে ফেলেছেন। আর আমি আমার দো‘আকে গোপন রেখেছে কিয়ামতের দিন আমার
উম্মতের শাফায়াতের জন্য। অতএব সেটি আমার প্রত্যেক উম্মতই ইনশাআল্লাহ পাবে যে
আল্লাহর সঙ্গে শির্ক না করে মারা যাবে’। [মুসলিম : ১৯৯]
কখনো
মুশরিকদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞতা হেতু কোনো কোনো মুসলিম শির্কে লিপ্ত হন। যেমন
মূসা আলাইহিস সালামের সগোত্রীয় সুনির্বাচিত লোকেরা সমুদ্রডুবি ও ফেরাউনের কবল থেকে
পরিত্রাণ লাভের পর শির্কে বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ তাদের ঘটনা তুলে ধরে বলেন,
﴿ وَجَٰوَزۡنَا بِبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱلۡبَحۡرَ فَأَتَوۡاْ عَلَىٰ قَوۡمٖ يَعۡكُفُونَ عَلَىٰٓ أَصۡنَامٖ لَّهُمۡۚ قَالُواْ يَٰمُوسَى ٱجۡعَل لَّنَآ إِلَٰهٗا كَمَا لَهُمۡ ءَالِهَةٞۚ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمٞ تَجۡهَلُونَ ١٣٨ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٞ مَّا هُمۡ فِيهِ وَبَٰطِلٞ مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٣٩ قَالَ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِيكُمۡ إِلَٰهٗا وَهُوَ فَضَّلَكُمۡ عَلَى ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٤٠ ﴾ [الاعراف: ١٣٨، ١٤٠]
‘আর বনী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অতঃপর তারা আসল এমন এক
কওমের কাছে যারা নিজদের মূর্তিগুলোর পূজায় রত ছিল। তারা বলল,
‘হে মূসা, তাদের যেমন উপাস্য আছে আমাদের
জন্য তেমনি উপাস্য নির্ধারণ করে দাও। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা
এমন এক কওম যারা মূর্খ। নিশ্চয় এরা যাতে আছে, তা ধ্বংসশীল
এবং তারা যা করত তা বাতিল। সে বলল, ‘আল্লাহ ছাড়া আমি কি তোমাদের
জন্য অন্য ইলাহ সন্ধান করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’
{সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ১৩৮-১৪০}
একইভাবে
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় দেখা যায়, মুসলিমরা হুনায়নের
যুদ্ধে বের হলে অজ্ঞানতবশত তারাও নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে
একই ধরনের আবেদন করে বসেন। যেমন সাহাবী আবূ ওয়াকেদ লাইছী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে
বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
خَرَجْنَا
مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى حُنَيْنٍ وَنَحْنُ
حُدَثَاءُ عَهْدٍ بِكُفْرٍ، ولِلْمُشْرِكِينَ سِدْرَةٌ يَعْكُفُونَ عِنْدَهَا،
ويَنُوطُونَ بِهَا أَسْلِحَتَهُمْ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ.
قَالَ: فَمَرَرْنَا
بِالسِّدْرَةِ، فَقُلْنَا: يَا
رَسُولَ اللهِ اجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ.
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«اللهُ أَكْبَرُ، إِنَّهَا السُّنَنُ، قُلْتُمْ وَالَّذِي
نَفْسِي بِيَدِهِ كَمَا قَالَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ: {اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ
إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ} [الأعراف:
138] ، لَتَرْكَبُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ »
‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুনায়নের (যুদ্ধের)
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি (নওমুসলিম)। একস্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুলগাছ ছিল যার
চারপাশে তারা একান্তভাবে বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। গাছটিকে তারা ‘যাত আনওয়াত’ বলত। আমরা
একদিন একটি কুলগাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, মুশরিকদের যেমন ‘যাতু আনওয়াত’ আছে আমাদের জন্যও
অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত’ (একটি গাছ) নির্ধারণ করে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহু আকবার’, তোমাদের এ দাবিটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি
ছাড়া আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার জীবন
তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছ যা বনী ইসরাঈল মূসা ‘আলাইহিস-সালামকে বলেছিল। তারা বলেছিল,
‘হে মূসা, মুশরিকদের যেমন মা‘বুদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা‘বুদ বানিয়ে দাও। মূসা ‘আলাইহিস-সালাম বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথাবার্তা বলছ’ {সূরা আল-আরাফ : ১৩৮}। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ। [তিরমিযী : ২১৮; তাবরানী : ৩২৯১; আহমাদ : ২১৯০০; তিরমিযী এ হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।]
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন,
﴿ وَقَدۡ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيۡكُمۡ ﴾ [الانعام: ١١٩]
‘... অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন’। {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১১৯}
আল্লাহ
যা দ্ব্যর্থহীনভাবে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, শির্ক করা তার অন্যতম। আল্লাহ বলেন,
﴿ ۞قُلۡ تَعَالَوۡاْ أَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمۡ عَلَيۡكُمۡۖ أَلَّا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗاۖ وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُم مِّنۡ إِمۡلَٰقٖ نَّحۡنُ نَرۡزُقُكُمۡ وَإِيَّاهُمۡۖ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَۖ وَلَا تَقۡتُلُواْ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ١٥١ ﴾ [الانعام: ١٥١]
‘বল, ‘এসো, তোমাদের উপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা
তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে
না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা
করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে
না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে
হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ
তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’। {সূরা আল-আন‘আম,
আয়াত : ১৫১}
মোটকথা, শয়তান তার কণ্ঠ ও কর্ম দিয়ে মুশরিকদের বিভ্রান্ত
করেছে। অথচ তারা ভেবেছে এ বুঝি কেবল একটি চিত্র বা কবরস্থ কেউ। কিয়ামত পর্যন্তই সে
এভাবে ছলে-বলে-কৌশলে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যাবে। আমাদের কর্তব্য হবে, সর্বদা
শয়তানের চক্রান্ত ও প্ররোচনা সম্পর্কে সতর্ক থাকা। আল্লাহর কাছে দিবারাত্র শয়তানের
কুমন্ত্রণা ও কূটচাল থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের
শির্ক থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে শির্কমুক্ত ঈমান নিয়ে কবরের
যাত্রী বানান। আমীন।
কৃতজ্ঞতাঃ islamhouse