লেখকঃ শাইখ মুহাম্মদ ইবন আহমদ আল-আম্মারী
পৃথিবীতে যত পাপ আছে তার মধ্যে
সবচেয়ে গুরুতর গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা। পৃথিবীতে শির্কের চেয়ে
জঘণ্য আর গুনাহ নেই। যে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া আমাদের একটি মুহূর্তও কাটে না,
কাউকে তাঁর সমকক্ষ, সমতুল্য বা সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে
পারে? তাই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ
لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨ ﴾ [النساء: ٤٨]
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর
সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি
চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে’। {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قُلْتُ يَا رَسُولَ
اللَّهِ، أَيُّ الذَّنْبِ أَعْظَمُ؟ قَالَ: «أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ
خَلَقَكَ»
‘আমি জিজ্ঞেস
করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, ‘তুমি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করবে; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’। [বুখারী : ৬০০১; মুসলিম : ৮৬]
আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করার অর্থ
আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্য কারও ইবাদত করা। তাঁর দাসত্বের স্বীকৃতির পাশাপাশি অন্য কারও দাসত্বও মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ ﴾ [النساء: ٣٦]
‘তোমরা ইবাদাত কর
আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না’। {সূরা
আন-নিসা, আয়াত : ৩৬}
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أُمِرۡتُ أَنۡ أَعۡبُدَ ٱللَّهَ وَلَآ أُشۡرِكَ بِهِۦ﴾ [الرعد: ٣٦]
‘বল, আমাকে কেবল আদেশ
দেয়া হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে শরীক
না করি’। {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ৩৬}
আরেক আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন,
﴿ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا
يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]
‘সুতরাং যে তার রবের
সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে’। {সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ১১০}
শির্ক যে সবচেয়ে বড় জুলুম ও
নিকৃষ্টতম পাপ তা কতভাবেই না আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ لُقۡمَٰنُ لِٱبۡنِهِۦ وَهُوَ يَعِظُهُۥ يَٰبُنَيَّ لَا تُشۡرِكۡ
بِٱللَّهِۖ إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣ ﴾ [لقمان: ١٣]
‘আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার
পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শির্ক করো না; নিশ্চয় শির্ক হল বড়
জুলুম’। {সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩}
যে শির্ক করে সে যালিম। কারণ
আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন আর সে ইবাদত করছে অন্য কারও। সে তো নিমকহারাম; অকৃতজ্ঞ।
আল্লাহ ইরশাদ করেন,
﴿ أَيُشۡرِكُونَ مَا لَا يَخۡلُقُ شَيۡٔٗا وَهُمۡ يُخۡلَقُونَ ١٩١ وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ
لَهُمۡ نَصۡرٗا وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ ١٩٢ ﴾ [الاعراف: ١٩١، ١٩٢]
‘তারা কি এমন কিছুকে
শরীক করে, যারা কোনো কিছু সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি
করা হয়? আর তারা তাদেরকে কোনো সাহায্য করতে পারে না এবং তারা
নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না’। {সূরা
আল-আ‘রাফ, আয়াত : ১৯১-১৯২}
তিনি তাকে রিযিক দেন আর সে অন্য
কারও শুকরিয়া আদায় করে। সে নুন খায় একজনের আর গুণ গায় আরেকজনের। আল্লাহ বলেন,
﴿ وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَهُمۡ رِزۡقٗا مِّنَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِ شَيۡٔٗا وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ ٧٣ ﴾ [النحل: ٧٣]
‘আর তারা আল্লাহ ছাড়া
এমন কিছুর উপসনা করে, যারা আসমানসমূহ ও যমীনে তাদের কোনো রিযকের মালিক নয় এবং
হতেও পারবে না’। {সূরা আন-নাহল, আয়াত : ৭৩}
মোটকথা,
শয়তান তার কণ্ঠ ও কর্ম দিয়ে মুশরিকদের বিভ্রান্ত করেছে। অথচ তারা ভেবেছে এ বুঝি
কেবল একটি চিত্র বা কবরস্থ কেউ। কিয়ামত পর্যন্তই সে এভাবে ছলে-বলে-কৌশলে মানুষকে
পথভ্রষ্ট করে যাবে। আমাদের কর্তব্য হবে, সর্বদা শয়তানের চক্রান্ত ও প্ররোচনা
সম্পর্কে সতর্ক থাকা। আল্লাহর কাছে দিবারাত্র শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কূটচাল থেকে
বাঁচার জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের শির্ক থেকে দূরে থাকার
তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে শির্কমুক্ত ঈমান নিয়ে কবরের যাত্রী বানান। আমীন।
আরও পড়ুনঃ শির্কের প্রকার
আরও
পড়ুনঃ মুশরিকের শাস্তি