যৌনাঙ্গ
রক্ষার পথে একান্ত বাধাসমূহ
আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াস
সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ ওয়া আ’লা আলি আস সাহাবায়ি আজমায়িন।আম্মাবাদ।
যে ব্যাক্তি
তার দুই চোয়াল এবং পায়ের মাঝের জিম্মাদার হবে,আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার
হবো।(৬:৬৪৭৪ সহিহুল বুখারী)
যৌনাঙ্গ রক্ষার ফলাফল যখন জান্নাতই তখন এর পথে যে কোন বাধা থাকা নিতান্ত
স্বাভাবিক। তাই নিন্মে এ জাতীয় কিছু বাধা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
১. মহিলাদের নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদঃ
বর্তমান যুগের মহিলারা বাজারে নতুন নতুন মডেলের পোশাক-পরিচ্ছদ
খুঁজে বেড়ায়। যা সামনে পায় তাই খরিদ করে,যদিও তা পাশ্চাত্য স্টাইলের এবং ইসলামী শরীয়ত
বিরোধী হয়। মূলত এই পোশাক-পরিচ্ছদ মুসলিম মহিলাদের ধ্বংস করার একটি বিরাট মাধ্যম। কারণ,
ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েলি পোশাকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ শরীর ঢেকে রাখা এবং
উলঙ্গতা ও চঞ্চলতা থেকে দূরে থাকা,যেন মহিলারা ফিতনা ও খবিস লোকদের খপ্পর থেকে দূরে
থাকতে সক্ষম হয়।
অন্য দিকে পাশ্চাত্য স্টাইলের পোশাকসমুহের উদ্দেশ্যই হচ্ছে,
উলঙ্গতা ও বেলেল্লাপনা। যাতে যুবক-যুবতীদের লুক্কায়িত কুপ্রবৃত্তি জাগরিত হয় এবং তাদের
মধ্যে যৌন ফ্যাসাদ সৃষ্টি
হয়। লজ্জা, সাধুতা ও পবিত্রতা বলতে যেন তাদের মধ্যে আর কিছু না অবশিষ্ট থাকে।
২. টিভি
চ্যানেলঃ
বর্তমান যুগে টিভি চ্যানেল গুলোতে প্রায় সব অনুষ্ঠান
এ বিবাহ বহির্ভূত
প্রেম-ভালবাসা,অশ্লীলতা,শরীয়ত বিরুধি কাজ কর্ম,শরীয়তের ব্যাপারে ঠাট্টা-মশকরা করা হয়।এতে
দর্শকদের উপর প্রভাব পরে ও এতে নিজের জানায়/অজানায় মানুষ গুনাহর দিকে ধাবিত হয়।
৩. ইন্টারনেটঃ
ইন্টারনেট হতে যেমন মানুষ অনেক উপকারী তথ্য পায়,তেমন
অনেক অপকার ও হয় এর মাধ্যমে।আজকাল ইন্টারনেট এ বিভিন্ন অশ্লীল সাইট সবাইকে
উদ্বুদ্ধ করছে পাপ কাজে।যেমনঃমাহরাম নয় এমন মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা(Dating Site),যা ধীরে ধীরে যেনা পর্যন্ত গড়ায়।
৪. অশ্লীল
ম্যাগাজিন ও রুচিহীন পত্র-পত্রিকাঃ
এই ধরনের ম্যাগাজিন ও পত্রিকা নতুন মডেলের পোশাক পরিহিত
বিভিন্ন নারী-পুরুষ এর ছবি দেয়।এতে করে এসব মানুষ ও অশ্লীল পোশাকের প্রতি আকর্ষণ
জন্মায় এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ছেড়ে মুসলিমরা কাফেরদের অনুকরণে লিপ্ত হয়।
৫. ক্যামেরা
ও ব্লু-টুথ যুক্ত মোবাইলঃ
মোবাইল এর মাধ্যমে যেমন যোগাযোগ রক্ষা করা যায় ঠিক তেমনি
এর মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার হয়।তাছাড়া আজকাল এর মাধ্যমে
কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও ধারন করা হয়।
৬.নারী
পুরুষের অবাধ মেলামেশাঃ
ইবনুল কাইয়িম(রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
এতে কোন সন্দেহ নেই যে,নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা সকল
বিপদ ও অঘটনের মূল।এরই কারনে আল্লাহ তা’ওয়ালা পক্ষ থেকে মানুষের উপর ব্যাপক শাস্তি
ও দুনিয়াতে ব্যাক্তিগত ও সমষ্টিগত ফ্যাসাদ সৃষ্টি হয়।
আর গোপনে নারী-পুরুষের সহাবস্থান তো বাভিচারের কয়েক ধাপ
এগিয়ে যাওয়া বৈ কি?
রাসুল (সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
কোন পুরুষ অন্য কোন মহিলার সাথে একান্তে মিলিত
হলে শয়তান হয় তাদের তৃতীয় জন।(তিরমিযী,হাদিস-১১৭১)
৭.অসৎ
বন্ধু ও বান্ধবীঃ
মানুষের জীবনে বন্ধুর প্রভাব অনেক।বন্ধুর খপ্পরে পরে
অনেকেই জাহিলিয়াতের পথে হাটে।তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে যাতে নেক কাজে
বন্ধুরা সহযোগিতা করে।আবু হুরাইরাহ (রাযি আল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত,রাসুলাল্লাহু
(সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
মানুষ তার একান্ত বন্ধুর ধর্মই গ্রহন করে
থাকে।সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই যেন একটু
ভেবে দেখে যে,সে কার সাথে বন্ধুত্তু পাতাতে যাচ্ছে।(তিরমিযি,হাদিস-২৩৭৮)
৮.বিলম্বে
বিবাহ করাঃ
বিবাহ হচ্ছে বৈধ পন্থায় যৌন উত্তেজনা প্রশমনের একটি
বিরাট মাধ্যম।সুতরাং কেউ বিবাহ করতে বিলম্ব করলে সে স্বভাবতই উত্তেজনা দমন করার
জন্য খারাপ পথ অবলম্বন করে।
আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ (রাযি আল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত
তিনি বলেন, রাসুল(সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ
হে যুবকরা! তোমাদের কেউ বিবাহ করতে সক্ষম হলে
সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়।কারন,তা চুক্ষুকে নিম্নগামী করে ও লজ্জাস্থান কে করে
পবিত্র।আর যে ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে।কারন,তা সত্যি যৌন
উত্তেজনা প্রশমনকারী। (বুখারি,হাদিস-৫০৬৫
ও মুসলিম,হাদিস-১৪০০)
৯.অপর
পুরুষ/মহিলার সাথে শৈথিল্য দেখানোঃ
উক্ত শৈথিল্য পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে হতে পারে।যদি
নারী/পুরুষ আট-সাট বা খোলামেলা বা চাকচিক্যময় পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায় এতে করে নষ্ট
চরিত্রের মানুষজন তাদের প্রতি ঝুকে পড়বে।উক্ত শিথিলতা কথাবার্তার ও আচার আচরণ ঢং
এর ক্ষেত্রে হতে পারে।এতে করে বিপরীত লিঙ্গের মানুষজন তার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।এ
ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা বলেনঃ
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য কোন স্ত্রীলোকদের মতন নও, যদি তোমরা ধর্মভীরুতা অবলন্বন কর তবে কথাবার্তায় তোমরা কোমল হয়ো না, পাছে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়, আর তোমরা বলো উত্তম কথাবার্তা। আর তোমাদের বাড়িতে তোমরা অবস্থান করবে, আর পূর্ববর্তী অজ্ঞানতার যুগের প্রদর্শনীর ন্যায় প্রদর্শন করো না, আর নামায কায়েম করো ও যাকাত আদায় করো, আর আল্লাহ্র ও তাঁর রসূলের আজ্ঞা পালন করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ চান, হে গৃহবাসিনীগণ! তোমাদের পবিত্র করতে পবিত্রতার দ্বারা। (সুরা আহজাব,আয়াত-৩২,৩৩)
১০.যত্রতত্র
চোখের দৃষ্টি ক্ষেপণঃ
দৃষ্টি নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানা ওয়া
তা’আলা পুরুষ-মহিলা উভয়কে আদেশ
দিয়েছেন।দৃষ্টির মাধ্যমে মনে চিন্তার উদয় হয়।
এছাড়া যৌনাঙ্গ রক্ষার পেছনে বাধা হিসেবে নিম্নোক্ত
বিষয়গুলোকেও গণ্য করা হয়ঃ
v যৌনকর্ম সম্পর্কীয় আলোচনা।
v গানের নেশা যেখানে প্রেম-ভালবাসার অশ্লীল
কথা বলা হয়।
v খারাপ উপন্যাস ও কবিতা পড়ার নেশা।
v শয়তানের কুমন্ত্রনার কাছে হার মানা।
v কু প্রবৃত্তির অনুসরণ।
v দীর্ঘ আশা ও দুনিয়ার ভালবাসা।
v নিয়ন্ত্রণহীন সুখভোগ।
v সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের লাগাতার
অবহেলা।
আল্লাহ আমাদের সকলকে যৌনাঙ্গ রক্ষার তওফিক দান
করুক।আমিন।
সঙ্কলিতঃ ব্যাভিচার ও সমকাম
সঙ্কলিতঃ ব্যাভিচার ও সমকাম
লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ
|