মুসলিমদের খলিফা নিযুক্ত করা হয় কিভাবে।

মুসলিমদের খলিফা নিযুক্ত করা হয় কিভাবে

মুসলিম শাসক অবশ্যয় সেসব মানুষকে নিয়োগ করবে যারা রাজ্যের উচ্চতর কাজ-কর্ম করার যোগ্য এবং তিনি অবশ্যই পরামর্শ করবে তাদের সাথে যারা জ্ঞানী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ।এটা উচিত নয় যে জনসাধারণ নির্বাচিত করবে তাদের আত্মীয়-স্বজন বা তাদের দলের সদস্য বা যে বেশী অর্থ দিয়েছে তাকে।
শেইখ সালিহ ইবন ফাওযান (রহঃ) বলেনঃ
“খলিফা বা শাসকের দায়িত্ব হচ্ছে তার নিচে সরকারী অবস্থান গুলোতে যোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ করা।তার ক্ষমতা আছে এসব অবস্থানে পারদর্শী ও সৎ লোক নির্বাচিত করার।আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাদের আদেশ করছেন যেন তোমরা আমানত তোমাদের বাসিন্দাদের সমর্পণ করো, আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার-আচার করো তখন যেন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ কি উত্তম উপদেশ তোমাদের দিয়ে থাকেন! নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বদর্শী (সুরা নিসা-৫৮)

এখানে শাসক ও কর্তিপক্ষকে বুঝানো হয়েছে।এখানে আমানত বলতে সরকারী পদ বুঝানো হয়েছে যেটা আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা শাসকের উপর আমানত হিসেবে ন্যস্ত করেছেন। যেভাবে এই দায়িত্ব পালন করা যায় তা হল,জনগন থেকে বাছাই করা  পারদর্শীতা ও সততা অনুসারে যেভাবে রাসুল (সালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও পরবর্তীতে তার খলিফারা ও বিভিন্ন মুসলিম যারা বিভিন্ন পদের জন্য শরিয়াহ অনুযায়ী যোগ্য ছিল।
বর্তমানে যে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে এটি ইসলামী ব্যবস্থা নয় বরং হতে পারে এতে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলাব্যাক্তিগত উদ্দেশ্য তৈরি হতে পারে।বরং তা পক্ষপাত ও লোভের বিষয় হতে পারে যা বিপদ ও রক্তপাতের কারণ হতে পারে।তারা অর্জন করতে পারে না সেইসব লক্ষ্য যা তাদের অর্জন করার প্রয়োজন বরং তারা নিলাম,ক্রয়-বিক্রয় মিথ্যা প্রচারনা করে।”
(আল-জাযীরাহ সংবাদপত্র,ইস্যু নং-১১৩৫৮)
ইসলামিক রাষ্ট্র চালানোর জন্য যে শাসক বা খলিফা নিযুক্ত হয় তিনটি উপায়েঃ

১. সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের( Decision makers) দ্বারা তাকে বাছাই করা হবে।
যেমনঃআবু বকর(রাযিঃ) খলিফা হয়েছিল সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের দ্বারা।অতঃপর সাহাবারা (রাযিঃ) তার হাতে বায়াত হয় ও শাসক হিসেবে তার অনুগত হয়।
উসমান (রাযিঃ) ঠিক একইভাবে খালিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন যখন উমার(রাযিঃ) এর পর কে খলিফা হবেন নির্ধারণে উমার(রাযিঃ) এর  বাছাইকৃত ৬ জন প্রবীণ সাহাবা দ্বারা গঠিত শুরার উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তখন আবদ আল-রাহমান ইবন ‘আওফ মুজাহির ও আনসারদের সাথে পরামর্শ  করে দেখতে পায় যে সাহাবারা উসমান(রাযিঃ) কে খলিফা করতে ইচ্ছুক তখন তিনি নিজে প্রথমে বায়াত হয় ও এরপর ৬ জনের অবশিষ্টরা অতঃপর মুজাহির ও আনসারগণ উসমান(রাযিঃ) এর হাতে বায়াত হয় ।
আলী (রাযিঃ) একইভাবে খালিফা হন যখন অধিকাংশ সিদ্ধান্ত প্রণেতারা তাকে খলিফা মনোনীত করে।

২. পূর্ববর্তী খলিফা যাকে খলিফা মনোনীত করে যান।
যেমনঃআবু বকর(রাযিঃ) উমার(রাযিঃ) কে তারপর খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন।

৩. অন্যদের উপর বলপ্রয়োগ করে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল।
যখন কোন খলিফা তার তলোয়ার এর সাহায্যে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল ও নিয়ন্ত্রন করে তখন তার অনুগত হওয়া বাধ্যতামুলক হয়ে যায়।যেমনঃউম্মায়াদ ও আব্বাসিদ খলিফা ও তার পরের খলিফারা।যদিও বা জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল শরিয়াহ এর বিপরীত তবুও বৃহত্তর স্বার্থে ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলার মত অনিষ্ট হতে বাচার জন্য খলিফার অনুগত হতে হবে যদি তিনি শরিয়াহ মোতাবেক রাষ্ট্র চালায়।

শেইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-‘উথাইমিন(রহঃ) বলেনঃ
“যদি কোন ব্যাক্তি বিদ্রোহ করে ও জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে তাহলে তার অনুগত হতে হবে।যদিও ক্ষমতা দখল তাদের(জনগণের) মতের বিরুদ্ধে হয়।

কারণ হচ্ছে যদি তার শাসন নিয়ে আপত্তি/বিবাদ  করা হয়,তাহলে এটি  শয়তানি পথে পরিচালিত হবে। যা হয়েছিল উম্মায়াদদের সময়ে যখন তারা জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে ও খলিফা হয় এবং লোকেরা তার অনুগত হয়েছিল আল্লাহর নির্দেশে।”
 (শারহ আল-‘আকিদাহ আল-সাফারীনিয়াহ,পৃষ্ঠা-৬৮৮)

আরও অধিক জানার জন্য দেখতে পারেনঃ
v  আহকাম আল-সুলতানিয়াহ,লেখকঃআবু’ল হাসান,আল-মাওয়ারদি
v  আহকাম আল-সুলতানিয়াহ,লেখকঃআবু আল-ফাররা
v  আল-তারতিব আল-ইদারিয়াহ,লেখকঃআল-কাট্টানি

লেখাটি IslamQA থেকে অনুবাদকৃত।মূল লেখাঃ http://islamqa.info/en/111836
(অনুবাদ-এ ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)