সদাকাতুল ফিতর এর বিধান



সদাকাতুল ফিতর এর বিধান

রামাদানের সিয়ামের ত্রুটির কারনে এবং গরিব অসহায় মানুষের উপকারার্থে ঈদের সালাতের পূর্বে গরিবদের যে নির্দিষ্টও পরিমান খাদ্যদ্রব্য দান করা হয় তাকে সদাকাতুল ফিতর বলা হয়

"
যার কাছে ঈদের দিন স্বীয় পরিবারের একদিন একরাতের ভরণ পোষণের খরচ বাদে এক সা' পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকবে তার উপরই যাকাতুল ফিতর ফরয হবে যার উপর যাকাতুল ফিতর ফরয তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন তেমনি নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন" -(কিতাবুল উম-ইমাম শাফেঈ, আল মাজমু আন্নভবী, ফিকহুস সুন্নাহ) 

এটা সকলের উপর কর্তব্য এবং এর জন্য যাকাতের নিসাব হওয়া শর্ত নয়এটা আদায় করতে হবে এক সা' পরিমান সেই এলাকার প্রধান খাদ্য দ্বারা টাকার মাধ্যমে বা অর্ধ সা' পরিমান আদাই করা কোন সাহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয় 

উল্লেখ্য, অর্ধ সা হচ্ছে সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম এক সাসমপরিমাণ কেজি ৪০ গ্রাম তবে চালের ক্ষেত্রে সেটা আড়াই (.) কেজির মত

ফিতরার সঠিক পরিমাণঃ (অর্ধ সা' না এক সা')

অর্ধ সা' গম ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারটা মুআবিয়া(রাঃ) এর নিজের মত

এই মতের বিরোধিতা করেছেন সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী(রাঃ)
তিনি বলেনঃ "আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ফিতরার প্রত্যেক স্বাধীন, পরাধীন, পুরুষ, মহিলা, ছোট বড় সকল মুসলমানের তরফ থেকে এক সা' খাদ্য, এক সা' পনির, এক সা' খেজুর অথবা এক সা' কিসমিস আদায় করতাম"
এই ভাবে আমরা সদকাহ আদায় করতাম

একবার মুআবিয়া (রাঃ) হজ্জ অথবা উমরা করতে এসে মদীনায় এলেন সেই সময় তিনি মিম্বরে খুৎবায় যে সব কথা বলছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল যে, "আমি মনে করি শামের অর্ধ সা' (উৎকৃষ্ট) গম এক সা' খেজুরের সমান" ফলে লোকেরা তার মত গ্রহন করে নিল

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, "কিন্তু আমি ততটা পরিমান খাদ্যই আজীবন দিতে থাকব, যতটা আমি পুর্বে (আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ) আদায় করতাম (বুখারী ১৫০৮, মুসলিম ৯৮৫, আবু দাউদ ১৬১৬)

অন্য এক বর্ননায় আছে , আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, "কিন্তু আমি ততটা পরিমান খাদ্যই আজীবন দিতে থাকব যতটা আমি পুর্বে (আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ) আদায় করতাম
এক সা' খাদ্য , এক সা' পনির, এক সা' খেজুর অথবা এক সা' কিসমিস এক ব্যক্তি তাকে বলল , "অথবা অর্ধ সা' গম ? " তিনি বললেন , "না এটা মুআবিয়ার(রাঃ) এর মুল্য নির্ধারন আমি তা গ্রহন করিনা এবং তার মতের উপর আমলও করিনা" (আলবানী /৩৩৯)

এখন আপনিই ঠিক করুন, আপনি কি পরিমাণ ফিতরা আদায় করবেন


যাকাতুল ফিতরা (দ্রব্য প্রসঙ্গ)

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেনঃ "রাসুল (সা) এর যুগে ইদুল ফিতরের দিন আমরা এক সাখাদ্য ফিতরা দিতাম তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনীর খেজুর" (সহিহ বুখারিঃ ১৫০৬; সহিহ মুসলিমঃ ৯৮৫; আবু দাউদঃ ১৬১৬)

সুতরাং দেশের প্রধান খাদ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হবে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে উপরোক্ত হাদিসে যে খাদ্য দ্রব্যের কথা বলা হয়েছে তা সে দেশের প্রধান প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য ছিল তাই তা থেকে তারা যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন সকল খাদ্য দ্রব্য দিয়ে

হাদিসে বর্নিত খাদ্য দ্রব্যের যে উল্লেখ রয়েছে তা উদাহরণ হিসাবে, নির্ধারণ হিসেবে নয় তাই দেশের প্রধান প্রচলিত খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা প্রদান করতে হবে আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য চাল, কাজেই চাল দিয়েই আমাদেরকে ফিতরা আদায় করতে হবে

ফিতরা ঈদের আগেই আদায় করে দিতে হবে ফিতরা দেয়ার নিয়ম হচ্ছে ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে শুরু করে ঈদের সালাতের আগেই তা দিয়ে দিতে হবে ঈদের দু-একদিন আগেও ফিতরা দেয়া যাবে

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।